এ দেশ আর পেছনে ফিরে যাবে না

আসাদুজ্জামান খান : আমার আর হারাবার কিছুই নেই, পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি।’ সেদিন বাঙালি জাতিও তাঁকে নিজের করে নিয়েছিল। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে ১৯৮১ সালে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।

 

বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরে দলকে একত্র করলেন এবং সারা বাংলাদেশ বিচরণ করে মানুষের মধ্যে মিশে যান। যাঁর ধমনিতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে মানুষের কল্যাণের জন্য জীবন উৎসর্গ করাই যেন তাঁর জীবনের ব্রত। বঙ্গবন্ধুর মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়ে দেশের মানুষকে একত্র করলেন। সারা বাংলাদেশের মানুষ যেখানেই তাঁকে পেয়েছে বৃদ্ধ মায়েরা তাঁকে জড়িয়ে ধরে আপ্লুত হয়ে বলতেন- এসেছে, শেখের বেটি এসেছে। নিশ্চয়ই আমরা আবার এগিয়ে যাব। তিনিই জানেন এ দেশের মানুষ কী চায়; বাংলাদেশের কোন জেলা কোন উপজেলার পাশ দিয়ে কী নদী প্রবাহিত; ওই এলাকার মানুষের কী সমস্যা তা তিনি বলে দিতে পারেন, কারণ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ হাসিনা। তিনি সারা বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে রয়েছেন।

 

কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে আইয়ুববিরোধী এবং ছয় দফা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন তখন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সংসার সামলানোর পাশাপাশি নেপথ্যে থেকে দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন; যা কাছ থেকে দেখেছেন শেখ হাসিনা। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করতেন এবং বঙ্গবন্ধুও তাঁকে বেশি কাছে টেনে নিতেন। সেজন্যই বঙ্গবন্ধুকন্যা মাঝেমধ্যে আমাদের বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা বলেন; জাতির পিতা কী কী করতে চেয়েছিলেন তা থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শিক্ষা নিয়েছিলেন এবং তাঁর নীতি আজ তিনি অনুসরণ করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথনকশা তৈরি করে গিয়েছিলেন তিনি সেটা অনুসরণ করে চলেছেন বলেই আজ তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সারা বিশ্বে বরেণ্য নেতায় পরিণত হয়েছেন। 

১৯৭৫-এর কালরাতের পর বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামরিক স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। পরবর্তী দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক পথচলায় স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করে একসময়ের দুর্ভিক্ষপ্রবণ বাংলাদেশকে আজ সারা বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত করেছেন। পৃথিবীতে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

 

পিতার মতো তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কখনো পিছপা হননি; দাবি আদায়ের মাধ্যমে আন্দোলন সফল করেই ফিরেছেন। সেজন্যই আজ বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে শুধু হৃদয় দিয়েই ভালোবাসে না, তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে মনে করে। শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত দক্ষ নেতৃত্বের ফলেই দেশে নিরাপত্তা ও উন্নয়নের যুগপৎ সুবাতাস বইছে। রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি বারবার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফল হয়েছেন। পার্বত্য শান্তিচুক্তি, গঙ্গার পানিচুক্তি, সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি, দীর্ঘদিনের স্থলসীমানা সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে ছিটমহলবাসীর দুর্ভোগ লাঘব করা, আইসিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন ইত্যাদি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা যেমন তাঁকে অবিসস্মরণীয় নেতায় পরিণত করেছে; তেমনি বিশ্বব্যাংকের অন্যায় আচরণ ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ বিশ্ব রাজনীতি-অর্থনীতির বিশ্লেষকদের কাছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে কঠিন প্রতিজ্ঞাদীপ্ত করে তোলে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৭৫-পরবর্তী সবচেয়ে দৃঢ় মনোবলের সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি টানা ৪১ বছর উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ১৮ বছরের বেশি সময় চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করছেন। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানোর পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গেছে বাংলাদেশকে। খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। ১৩ বছর আগের মাথাপিছু আয়কে চার গুণের বেশি বাড়িয়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত করেছেন। দেশের রিজার্ভ সর্বকালের রিজার্ভে উন্নীত করে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছেন। পেয়েছেন ৪০টির বেশি আন্তর্জাতিক পদক ও স্বীকৃতি। লিখেছেন ৪০টির অধিক বই। এক জীবনে বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদও এত সাফল্য অর্জন করতে পারেননি।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব অনন্য ও অতুলনীয় অর্জনের পেছনে রয়েছে নানান চড়াই-উতরাই ও স্বজন হারানোর বেদনার দীর্ঘ সংগ্রামের সাহসী জীবন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার প্রচেষ্টা হয়েছিল, আমার মনে হয় আল্লাহ তাঁকে নিজহাতে রক্ষা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করবেন বলেই হয়তো আল্লাহ শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ কমপক্ষে ২০ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তাঁর পিছু ছাড়েনি। কিন্তু জাতীয় জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাৎক্ষণিক ও যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে তিনি সময় ক্ষেপণ করেন না। প্রাথমিক অবস্থায় তাঁর কিছু সিদ্ধান্তে আমরা দোদুল্যমান থাকলেও পরবর্তীতে তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তটিই যথার্থ ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। অদম্য সাহস, দৃঢ় মনোবল, সততা, নিষ্ঠা, মনন-মেধা, প্রজ্ঞা ও দক্ষতার বলেই তিনি আজ সফল রাষ্ট্রনায়ক থেকে হয়েছেন বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা।

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সংবিধানে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে বৈষম্যহীন একটি সমাজব্যবস্থা, যেখানে জাতপাতের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ থাকবে না। দেশের উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিমে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। নারী-পুরুষের মধ্যে সম-অধিকার থাকবে। গ্রাম আর শহরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। কাউকে পেছনে ফেলে, কাউকে অর্থনীতির মূল স্রোতধারার বাইরে রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা নয়। এ নীতিতেই দেশের মানুষকে বৈষম্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।

 

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতো। বঙ্গবন্ধুর কন্যা যদি বেঁচে না থাকতেন তাহলে আমরা এই বাংলাদেশ পেতাম না, যে বাংলাদেশকে আমরা হৃদয় দিয়ে ধারণ করি। বাংলাদেশ অতল অন্ধকারে নিমজ্জিত হতো যা আমরা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দেখেছি। বাঙালির হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল এবং এতদিন আমাদের কপালে যে কালো দাগটি ছিল সেটি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ঘোচাতে পেরে স্বস্তি পাচ্ছি। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা বেঁচে ছিলেন বলেই জাতির পিতার হত্যা ও জেলহত্যার বিচার সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ এ সাহসী ভূমিকার জন্য তাঁকে চিরদিন মনে রাখবে।

 

আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণ পালন করতে পেরেছি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। মুজিব শতবর্ষে তিনি ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না যেটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। স্বাধীনতার সুফল হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরের সুবিধাসম্পন্ন নগরে পরিণত করতে আমার গ্রাম-আমার শহর কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

 

কভিড-১৯ মহামারি মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন-জীবিকা মারাত্মক ব্যাহত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এ অবস্থা সফলভাবে মোকাবিলা করছে। জাপানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিকেই এশিয়া প্রকাশিত ‘নিকেই কভিড-১৯ রিকভারি সূচক’-এর তথ্যমতে করোনা মহামারি সামলে ওঠার ক্ষেত্রে বিশ্বের যে দেশগুলো সবচেয়ে ভালো করছে, সে তালিকায় পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার ওপরে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের ফলে এ সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এ সময়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ইতিবাচক ছিল।

 

নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু চিন্তা করতেন পুরুষের সঙ্গে নারীকেও এগিয়ে যেতে হবে। সেজন্য তিনি পুলিশ বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নারী ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে নারীদের অন্তর্ভুক্তি করেছেন বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী শিক্ষায় ব্যাপক সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ থেকে ইউনেস্কো পিস ট্রি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। নারী ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকার জন্য এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত এবং ইউএন উইমেনের পক্ষ থেকে প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহারসংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কারণে বাংলাদেশকে সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসংক্রান্ত সাফল্যের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ইউএনইপি থেকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ ঘোষণা করা হয়। এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে।

 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগে, ২০১৩ সালেই অর্জন করে বিশ্বকে তাক লগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ফলে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমে এবং বাংলাদেশে তা ক্রমহ্রাসমান। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্জন করবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসডিজি অর্জনের সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার দেওয়া হয়। দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সর্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিশ্ব সংস্থার সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক নিউইয়র্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ পুরস্কার প্রদান করে। ব্যক্তিজীবনে আমি সৌভাগ্যবান কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম আর তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরির সরাসরি তত্ত্বাবধানে দেশসেবায় কাজ করতে পারছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে যত দেখি ততই বিস্মিত হই। জাতীয় জীবনের উন্নয়ন ও দুর্যোগকালীন প্রতিটি সিদ্ধান্তে তিনি দূরদর্শিতার প্রমাণ রেখেছেন।

 

ওয়ান-ইলেভেন সরকার আমেরিকা থেকে যখন তাঁকে দেশে ফিরতে দিচ্ছিল না তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি আমার দেশে ফিরে যাবই এবং তিনি দেশে ফিরেছেন। সেদিনও শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য বাংলাদেশের জনগণ বাঁধভাঙা স্রোতের মতো সমবেত হয়েছিল। তিনি ফিরে এলে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার এলাকার হোমওয়ার্ক তুমি কেমন করেছ?’ জবাবে বলেছিলাম, ‘এই আসনটি (ঢাকা-১০ বর্তমানে-১২) আমরা আপনাকে উপহার দিতে পারব।’ তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‘কাজ করে যাও’। কিন্তু তিনি যে আমাকে নমিনেশন দেবেন তা তখন ভাবতে পারিনি। নির্বাচনের পর তিনি আমাকে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। ফলে বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের বিষয়ে আমি সম্যক ধারণা পাই। তা ছাড়া তিনি আমাকে যে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমি তা সম্পূর্ণরূপে পালন করতে চেষ্টা করেছি। দায়িত্বগুলো যেন আমি সুচারুভাবে পালন করতে পারি সেজন্য তিনি আমাকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন যাতে আমি আরও কাজ শিখতে বা জানতে পারি।

 

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি আমাকে প্রতিমন্ত্রী করলেন। আমার ধারণা ছিল না যে আমি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হব। তিনি যখন আমাকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য করলেন অনেকটাই অবাক হয়েছিলাম। তারপর যখন তাঁকে সালাম করতে গেলাম তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি বিস্মিত হয়েছ?’ আমি বলেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি সত্যিই বিস্মিত! তিনি বললেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে; মানুষ তাদের স্বজনদের হারিয়েছে। এ মুক্তিযুদ্ধকে আমরা ভুলতে পারব না। তুমি একজন সম্মুখসমরের মুক্তিযোদ্ধা; এজন্যই তোমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছি।’ তারপর বের হয়ে আসার সময় তিনি আমাকে বলেন, ‘আজ থেকে তুমি সারা বাংলাদেশ ঘুরবে, প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি উপজেলায় কী কী সমস্যা আছে ঘুরে ঘুরে দেখবে এবং এগুলো নিয়ে কাজ করবে।’ তিনি আমাকে দেশের কোন প্রান্তে কোন ধরনের সমস্যা বিদ্যমান এবং তার সমাধান প্রক্রিয়া নিয়ে নির্দেশনা দিলেন। আমি তাঁর নির্দেশনামতো সারা দেশ ঘুরছি। আমার বাসায়ও যারা আসেন মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের কথা শুনি; চেষ্টা করি সবার সমস্যার সমাধান করতে।

 

রাষ্ট্রীয় কার্য সঞ্চালনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ বা কথা হয়, তিনি প্রায়ই আমাকে বলেন, জাতির পিতা সাড়ে তিন বছরে যেসব কাজকর্ম করে গেছেন, অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর হাতে নেওয়া পরিকল্পনা এবং বঙ্গবন্ধু যেসব নির্দেশনা দিয়ে গেছেন এগুলো ধাপে ধাপে তিনি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী বিশ্বনেতা। তাঁর দেখানো পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

 

দেশের বড় কোনো সমস্যা হলে তিনি সারাক্ষণই আমাদের সবাইকে নির্দেশনা দেন; ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার রাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা রাত জেগে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পূর্ববর্তী বিএনপি সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উদ্ভূত দেশি জঙ্গি-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে তিনি দেশবাসীকে ডাক দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নির্দেশনা দেন বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে জঙ্গিবিরোধী সভা-সেমিনার করতে। তাঁর আহ্বানে ছাত্র, শিক্ষক, জনতা, ইমাম, পুরোহিত, সব ধর্মের গুরু, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বলেই বাংলাদেশ আজ জঙ্গিমুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসায় যখন রাতে আক্রমণ হলো তিনি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

 

বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে তিনি যতটা অনমনীয় আবার মানুষের সেবায় তিনি ঠিক ব্যতিক্রম। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট যখন রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল ঠিক তখনই শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন। যখন দলে দলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছিল, আমরা তাঁর দিকনির্দেশনা চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমরা কি ভুলে গেছ ১৯৭১ সালের কথা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তোমরা কি পার্শ¦বর্তী দেশে আশ্রয় নেওনি? দেশের ১৬ কোটি মানুষকে যদি খাওয়াতে পারি তাহলে এদেরও খাওয়াতে পারব। আসতে দাও; অন্তত জীবনটা তো বাঁচবে ওদের।’ আজ বিশ্ববিবেক শেখ হাসিনাকে বলেন ‘মানবতার জননী’, ‘স্টার অব দ্য ইস্ট’। তিনি এখন বিশ্বনেত্রী।

 

বিরোধী দলে থাকাকালেও তিনি রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা রেখেছিলেন; বিরোধী দলে থাকাকালে ১৯৯৪ সালে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গঠনের জন্য সংসদে একটি বেসরকারি বিল উত্থাপন করা হয়। যার ফলে বর্তমানে কোস্টগার্ড তাঁরই নির্দেশে একটি সুদক্ষ বাহিনী হিসেবে গঠিত হয়েছে; যা উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা প্রদানসহ ব্লু-ইকোনমির নিরাপত্তায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা দেশ থেকে চরমপন্থি নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি। বহু মাদক ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। দেশের শ্বাসযন্ত্র খ্যাত সুন্দরবন এখন বন ও জলদস্যুমুক্ত। এসব চরমপন্থি, মাদক ব্যবসায়ী ও জলদস্যুর পুনর্বাসনও তিনি করেছেন যেন তারা স্বাভাবিক জীবনে স্থায়ী হতে পারে।

তিনি এভাবে অসংখ্য জাতীয় সমস্যা নিজকাঁধে নিয়ে সমাধান করেছেন এবং সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কখনো বিশ্রামে যান না। আমি তাঁকে কাছ থেকে যতই দেখি ততই বিস্মিত হই। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, দেশকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর এ দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব প্রয়োজন। তিনি ২০০৮ সালে বলেছিলেন বদলে দেবেন বাংলাদেশকে। তিনি যথার্থই বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা যতদিন নেতৃত্বে থাকবেন ততদিন দুর্বার গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ দেশকে আর পেছনে ফিরে যেতে হবে না। একমাত্র তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে। তাঁর দূরদর্শিতায়, দক্ষতায় বারবার তা প্রমাণ করেছেন।

লেখক : জাতীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ আমাদের এসেছে: মাসুদ সাঈদী

» নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান

» অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ চারজন মাদক চোরা কারবারি আটক

» সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব, যা জানালেন বদিউল আলম

» ২ মার্চ ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান মঈন খানের

» কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়: আইজিপি

» সুন্দর ব্যবহার ও আচরণের বিনিময়ে জান্নাত! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।

» বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পট লোন পেলেন সিলেটের সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা

» ‘ইউসিবি নাইট’ আয়োজনে গ্রাহক ও অংশীদারদের অব্যাহত সহযোগিতার স্বীকৃতি

» ইসলামপুর ওয়ার্ড কৃষক দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

এ দেশ আর পেছনে ফিরে যাবে না

আসাদুজ্জামান খান : আমার আর হারাবার কিছুই নেই, পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি।’ সেদিন বাঙালি জাতিও তাঁকে নিজের করে নিয়েছিল। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে ১৯৮১ সালে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।

 

বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরে দলকে একত্র করলেন এবং সারা বাংলাদেশ বিচরণ করে মানুষের মধ্যে মিশে যান। যাঁর ধমনিতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে মানুষের কল্যাণের জন্য জীবন উৎসর্গ করাই যেন তাঁর জীবনের ব্রত। বঙ্গবন্ধুর মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়ে দেশের মানুষকে একত্র করলেন। সারা বাংলাদেশের মানুষ যেখানেই তাঁকে পেয়েছে বৃদ্ধ মায়েরা তাঁকে জড়িয়ে ধরে আপ্লুত হয়ে বলতেন- এসেছে, শেখের বেটি এসেছে। নিশ্চয়ই আমরা আবার এগিয়ে যাব। তিনিই জানেন এ দেশের মানুষ কী চায়; বাংলাদেশের কোন জেলা কোন উপজেলার পাশ দিয়ে কী নদী প্রবাহিত; ওই এলাকার মানুষের কী সমস্যা তা তিনি বলে দিতে পারেন, কারণ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ হাসিনা। তিনি সারা বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে রয়েছেন।

 

কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে আইয়ুববিরোধী এবং ছয় দফা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন তখন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সংসার সামলানোর পাশাপাশি নেপথ্যে থেকে দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন; যা কাছ থেকে দেখেছেন শেখ হাসিনা। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করতেন এবং বঙ্গবন্ধুও তাঁকে বেশি কাছে টেনে নিতেন। সেজন্যই বঙ্গবন্ধুকন্যা মাঝেমধ্যে আমাদের বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা বলেন; জাতির পিতা কী কী করতে চেয়েছিলেন তা থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শিক্ষা নিয়েছিলেন এবং তাঁর নীতি আজ তিনি অনুসরণ করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথনকশা তৈরি করে গিয়েছিলেন তিনি সেটা অনুসরণ করে চলেছেন বলেই আজ তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সারা বিশ্বে বরেণ্য নেতায় পরিণত হয়েছেন। 

১৯৭৫-এর কালরাতের পর বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামরিক স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। পরবর্তী দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক পথচলায় স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করে একসময়ের দুর্ভিক্ষপ্রবণ বাংলাদেশকে আজ সারা বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত করেছেন। পৃথিবীতে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

 

পিতার মতো তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কখনো পিছপা হননি; দাবি আদায়ের মাধ্যমে আন্দোলন সফল করেই ফিরেছেন। সেজন্যই আজ বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে শুধু হৃদয় দিয়েই ভালোবাসে না, তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে মনে করে। শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত দক্ষ নেতৃত্বের ফলেই দেশে নিরাপত্তা ও উন্নয়নের যুগপৎ সুবাতাস বইছে। রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি বারবার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফল হয়েছেন। পার্বত্য শান্তিচুক্তি, গঙ্গার পানিচুক্তি, সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি, দীর্ঘদিনের স্থলসীমানা সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে ছিটমহলবাসীর দুর্ভোগ লাঘব করা, আইসিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন ইত্যাদি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা যেমন তাঁকে অবিসস্মরণীয় নেতায় পরিণত করেছে; তেমনি বিশ্বব্যাংকের অন্যায় আচরণ ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ বিশ্ব রাজনীতি-অর্থনীতির বিশ্লেষকদের কাছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে কঠিন প্রতিজ্ঞাদীপ্ত করে তোলে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৭৫-পরবর্তী সবচেয়ে দৃঢ় মনোবলের সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি টানা ৪১ বছর উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ১৮ বছরের বেশি সময় চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করছেন। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানোর পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গেছে বাংলাদেশকে। খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। ১৩ বছর আগের মাথাপিছু আয়কে চার গুণের বেশি বাড়িয়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত করেছেন। দেশের রিজার্ভ সর্বকালের রিজার্ভে উন্নীত করে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছেন। পেয়েছেন ৪০টির বেশি আন্তর্জাতিক পদক ও স্বীকৃতি। লিখেছেন ৪০টির অধিক বই। এক জীবনে বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদও এত সাফল্য অর্জন করতে পারেননি।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব অনন্য ও অতুলনীয় অর্জনের পেছনে রয়েছে নানান চড়াই-উতরাই ও স্বজন হারানোর বেদনার দীর্ঘ সংগ্রামের সাহসী জীবন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার প্রচেষ্টা হয়েছিল, আমার মনে হয় আল্লাহ তাঁকে নিজহাতে রক্ষা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করবেন বলেই হয়তো আল্লাহ শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ কমপক্ষে ২০ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তাঁর পিছু ছাড়েনি। কিন্তু জাতীয় জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাৎক্ষণিক ও যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে তিনি সময় ক্ষেপণ করেন না। প্রাথমিক অবস্থায় তাঁর কিছু সিদ্ধান্তে আমরা দোদুল্যমান থাকলেও পরবর্তীতে তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তটিই যথার্থ ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। অদম্য সাহস, দৃঢ় মনোবল, সততা, নিষ্ঠা, মনন-মেধা, প্রজ্ঞা ও দক্ষতার বলেই তিনি আজ সফল রাষ্ট্রনায়ক থেকে হয়েছেন বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা।

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সংবিধানে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে বৈষম্যহীন একটি সমাজব্যবস্থা, যেখানে জাতপাতের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ থাকবে না। দেশের উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিমে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। নারী-পুরুষের মধ্যে সম-অধিকার থাকবে। গ্রাম আর শহরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। কাউকে পেছনে ফেলে, কাউকে অর্থনীতির মূল স্রোতধারার বাইরে রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা নয়। এ নীতিতেই দেশের মানুষকে বৈষম্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।

 

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতো। বঙ্গবন্ধুর কন্যা যদি বেঁচে না থাকতেন তাহলে আমরা এই বাংলাদেশ পেতাম না, যে বাংলাদেশকে আমরা হৃদয় দিয়ে ধারণ করি। বাংলাদেশ অতল অন্ধকারে নিমজ্জিত হতো যা আমরা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দেখেছি। বাঙালির হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল এবং এতদিন আমাদের কপালে যে কালো দাগটি ছিল সেটি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ঘোচাতে পেরে স্বস্তি পাচ্ছি। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা বেঁচে ছিলেন বলেই জাতির পিতার হত্যা ও জেলহত্যার বিচার সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ এ সাহসী ভূমিকার জন্য তাঁকে চিরদিন মনে রাখবে।

 

আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণ পালন করতে পেরেছি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। মুজিব শতবর্ষে তিনি ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না যেটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। স্বাধীনতার সুফল হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরের সুবিধাসম্পন্ন নগরে পরিণত করতে আমার গ্রাম-আমার শহর কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

 

কভিড-১৯ মহামারি মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন-জীবিকা মারাত্মক ব্যাহত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এ অবস্থা সফলভাবে মোকাবিলা করছে। জাপানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিকেই এশিয়া প্রকাশিত ‘নিকেই কভিড-১৯ রিকভারি সূচক’-এর তথ্যমতে করোনা মহামারি সামলে ওঠার ক্ষেত্রে বিশ্বের যে দেশগুলো সবচেয়ে ভালো করছে, সে তালিকায় পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার ওপরে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের ফলে এ সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এ সময়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ইতিবাচক ছিল।

 

নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু চিন্তা করতেন পুরুষের সঙ্গে নারীকেও এগিয়ে যেতে হবে। সেজন্য তিনি পুলিশ বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নারী ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে নারীদের অন্তর্ভুক্তি করেছেন বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী শিক্ষায় ব্যাপক সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ থেকে ইউনেস্কো পিস ট্রি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। নারী ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকার জন্য এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত এবং ইউএন উইমেনের পক্ষ থেকে প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহারসংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কারণে বাংলাদেশকে সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসংক্রান্ত সাফল্যের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ইউএনইপি থেকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ ঘোষণা করা হয়। এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে।

 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগে, ২০১৩ সালেই অর্জন করে বিশ্বকে তাক লগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ফলে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমে এবং বাংলাদেশে তা ক্রমহ্রাসমান। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্জন করবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসডিজি অর্জনের সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার দেওয়া হয়। দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সর্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিশ্ব সংস্থার সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক নিউইয়র্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ পুরস্কার প্রদান করে। ব্যক্তিজীবনে আমি সৌভাগ্যবান কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম আর তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরির সরাসরি তত্ত্বাবধানে দেশসেবায় কাজ করতে পারছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে যত দেখি ততই বিস্মিত হই। জাতীয় জীবনের উন্নয়ন ও দুর্যোগকালীন প্রতিটি সিদ্ধান্তে তিনি দূরদর্শিতার প্রমাণ রেখেছেন।

 

ওয়ান-ইলেভেন সরকার আমেরিকা থেকে যখন তাঁকে দেশে ফিরতে দিচ্ছিল না তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি আমার দেশে ফিরে যাবই এবং তিনি দেশে ফিরেছেন। সেদিনও শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য বাংলাদেশের জনগণ বাঁধভাঙা স্রোতের মতো সমবেত হয়েছিল। তিনি ফিরে এলে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার এলাকার হোমওয়ার্ক তুমি কেমন করেছ?’ জবাবে বলেছিলাম, ‘এই আসনটি (ঢাকা-১০ বর্তমানে-১২) আমরা আপনাকে উপহার দিতে পারব।’ তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‘কাজ করে যাও’। কিন্তু তিনি যে আমাকে নমিনেশন দেবেন তা তখন ভাবতে পারিনি। নির্বাচনের পর তিনি আমাকে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। ফলে বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের বিষয়ে আমি সম্যক ধারণা পাই। তা ছাড়া তিনি আমাকে যে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমি তা সম্পূর্ণরূপে পালন করতে চেষ্টা করেছি। দায়িত্বগুলো যেন আমি সুচারুভাবে পালন করতে পারি সেজন্য তিনি আমাকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন যাতে আমি আরও কাজ শিখতে বা জানতে পারি।

 

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি আমাকে প্রতিমন্ত্রী করলেন। আমার ধারণা ছিল না যে আমি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হব। তিনি যখন আমাকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য করলেন অনেকটাই অবাক হয়েছিলাম। তারপর যখন তাঁকে সালাম করতে গেলাম তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি বিস্মিত হয়েছ?’ আমি বলেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি সত্যিই বিস্মিত! তিনি বললেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে; মানুষ তাদের স্বজনদের হারিয়েছে। এ মুক্তিযুদ্ধকে আমরা ভুলতে পারব না। তুমি একজন সম্মুখসমরের মুক্তিযোদ্ধা; এজন্যই তোমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছি।’ তারপর বের হয়ে আসার সময় তিনি আমাকে বলেন, ‘আজ থেকে তুমি সারা বাংলাদেশ ঘুরবে, প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি উপজেলায় কী কী সমস্যা আছে ঘুরে ঘুরে দেখবে এবং এগুলো নিয়ে কাজ করবে।’ তিনি আমাকে দেশের কোন প্রান্তে কোন ধরনের সমস্যা বিদ্যমান এবং তার সমাধান প্রক্রিয়া নিয়ে নির্দেশনা দিলেন। আমি তাঁর নির্দেশনামতো সারা দেশ ঘুরছি। আমার বাসায়ও যারা আসেন মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের কথা শুনি; চেষ্টা করি সবার সমস্যার সমাধান করতে।

 

রাষ্ট্রীয় কার্য সঞ্চালনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ বা কথা হয়, তিনি প্রায়ই আমাকে বলেন, জাতির পিতা সাড়ে তিন বছরে যেসব কাজকর্ম করে গেছেন, অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর হাতে নেওয়া পরিকল্পনা এবং বঙ্গবন্ধু যেসব নির্দেশনা দিয়ে গেছেন এগুলো ধাপে ধাপে তিনি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী বিশ্বনেতা। তাঁর দেখানো পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

 

দেশের বড় কোনো সমস্যা হলে তিনি সারাক্ষণই আমাদের সবাইকে নির্দেশনা দেন; ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার রাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা রাত জেগে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পূর্ববর্তী বিএনপি সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উদ্ভূত দেশি জঙ্গি-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে তিনি দেশবাসীকে ডাক দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নির্দেশনা দেন বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে জঙ্গিবিরোধী সভা-সেমিনার করতে। তাঁর আহ্বানে ছাত্র, শিক্ষক, জনতা, ইমাম, পুরোহিত, সব ধর্মের গুরু, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বলেই বাংলাদেশ আজ জঙ্গিমুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসায় যখন রাতে আক্রমণ হলো তিনি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

 

বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে তিনি যতটা অনমনীয় আবার মানুষের সেবায় তিনি ঠিক ব্যতিক্রম। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট যখন রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল ঠিক তখনই শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন। যখন দলে দলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছিল, আমরা তাঁর দিকনির্দেশনা চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমরা কি ভুলে গেছ ১৯৭১ সালের কথা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তোমরা কি পার্শ¦বর্তী দেশে আশ্রয় নেওনি? দেশের ১৬ কোটি মানুষকে যদি খাওয়াতে পারি তাহলে এদেরও খাওয়াতে পারব। আসতে দাও; অন্তত জীবনটা তো বাঁচবে ওদের।’ আজ বিশ্ববিবেক শেখ হাসিনাকে বলেন ‘মানবতার জননী’, ‘স্টার অব দ্য ইস্ট’। তিনি এখন বিশ্বনেত্রী।

 

বিরোধী দলে থাকাকালেও তিনি রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা রেখেছিলেন; বিরোধী দলে থাকাকালে ১৯৯৪ সালে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গঠনের জন্য সংসদে একটি বেসরকারি বিল উত্থাপন করা হয়। যার ফলে বর্তমানে কোস্টগার্ড তাঁরই নির্দেশে একটি সুদক্ষ বাহিনী হিসেবে গঠিত হয়েছে; যা উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা প্রদানসহ ব্লু-ইকোনমির নিরাপত্তায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা দেশ থেকে চরমপন্থি নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি। বহু মাদক ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। দেশের শ্বাসযন্ত্র খ্যাত সুন্দরবন এখন বন ও জলদস্যুমুক্ত। এসব চরমপন্থি, মাদক ব্যবসায়ী ও জলদস্যুর পুনর্বাসনও তিনি করেছেন যেন তারা স্বাভাবিক জীবনে স্থায়ী হতে পারে।

তিনি এভাবে অসংখ্য জাতীয় সমস্যা নিজকাঁধে নিয়ে সমাধান করেছেন এবং সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কখনো বিশ্রামে যান না। আমি তাঁকে কাছ থেকে যতই দেখি ততই বিস্মিত হই। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, দেশকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর এ দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব প্রয়োজন। তিনি ২০০৮ সালে বলেছিলেন বদলে দেবেন বাংলাদেশকে। তিনি যথার্থই বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা যতদিন নেতৃত্বে থাকবেন ততদিন দুর্বার গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ দেশকে আর পেছনে ফিরে যেতে হবে না। একমাত্র তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে। তাঁর দূরদর্শিতায়, দক্ষতায় বারবার তা প্রমাণ করেছেন।

লেখক : জাতীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com